Alor Sandhane - আলোর সন্ধানে



নবম পর্বঃ

অবতার ও পূর্ণব্রহ্ম :

মতুয়ারা শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুরকে পূর্ণব্রহ্ম পূর্ণাবতার বলেই মানেন । এই পূর্ণব্রহ্মঅবতার’-এর ধারনাটি আমাদের কাছে পরিষ্কার হওয়া প্রয়োজন । শ্রীমত্ অশ্বিনী সরকার একটি গানের শেষ ছত্রে বলেছেন------

 সেই হরির নাম লয়ে এবার, এল হরিশ্চন্দ্রআমার,

কলির জীব করিল নিস্তার, অশ্বিনী নামে হল বাম । (“শ্রীশ্রীহরি সঙ্গীত”)

 শ্রীশ্রীহরি-গুরুচাঁদ ঠাকুরের পরম ভক্ত অশ্বিনী গোঁসাইয়ের এই গানটি হতে পরিস্কার বোঝা যায় যে এই হরিশ্চন্দ্রঅর্থাৎ হরিচাঁদ ঠাকুরআর সেই হরিঅর্থাৎ বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্তাবা পরম শক্তিএক নয় । হরিচাঁদ ঠাকুর অধর্মের(যা যুগ যুগ ধরে মানুষকে ধর্মবলে বোঝানো হয়েছিল) সমস্ত রকম অবাঞ্ছিত বেড়াজাল ভেঙে দিয়ে হাতে কাজ ও মুখে হরিনামের মাধ্যমে পবিত্র গৃহ ও সুন্দর সমাজ গঠনের মধ্য দিয়ে সেই হরিঅর্থাৎ অসীম শক্তির সাথে যোগাযোগের এক নবদিশা দেখিয়েছেন । সীমার মধ্যে থেকে অসীমের মাঝে মিলনের এমন সুন্দর পথ আর হতে পারে না । তাহলে হরিচাঁদ ঠাকুর কি পূর্ণাবতার বা পূর্ণব্রহ্ম নয় ?

 অবতার কথার ব্যাখ্যা :-

পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা গেছে যখনই অনাচার-অত্যাচার, অপশাষন-শোষনে সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে তখনই কোন না কোন মহাপুরুষের বা যুগনায়কের আবির্ভাব হয়েছে এক যুগ সন্ধিক্ষণে । তাঁরা আধ্যাত্মিক চেতনা এবং সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করেছেন সমস্তরকম অন্যায় অপশাষনের বিরুদ্ধে । মানুষকে সঠিক পথে চলার দিশা দেখিয়েছেন । তাঁরা সময়ের সাপেক্ষে অবকে (ধরণীকে) তারিতে সাহায্য করেছেন । তাই তাঁরা অবতার। অবতার মানে অসীম শক্তিএসে জন্মগ্রহন করেছেন----- এ ধারনা সঠিক নয়, যা পূর্বেই আলোচিত হয়েছে । বিশ্বব্রহ্মান্ডের সবকিছুই সেই অসীম শক্তির অংশ, আমাদের শুধু দেখার চোখ নেই, অনুভব করার মত অনুভবনেই ! অশ্বিনী গোঁসাই তাঁর সাধনা ও ভক্তিবলে অনুভব করেছিলেন ঈশ্বরকে, তাই তিনিই এমন গান লিখতে পারেন । সব কিছু যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় না কারণ, আমাদের যুক্তিরও একটা গন্ডি আছে কিন্তু অসীমের কোনো গন্ডি নেই ! শুধু এতটুকুই বলা যায়----- ‘ভক্তি আর বিশ্বাস যার, ঈশ্বর তাঁর।

 পূর্ণব্রহ্মের ব্যাখ্যা :-

হরিচাঁদ ঠাকুর ব্যতীত তথাকথিত অবতার যাদেরকে বলা হয় যেমন------ রাম, কৃষ্ণ, গৌতম বুদ্ধ, গৌরহরি, রামকৃষ্ণ বা আরও যারা আছেন, দেখা যায় এরা প্রত্যেকেই শিক্ষা এবং জ্ঞান লাভ করার জন্য কোন গুরুর শরনাপন্ন হয়েছেন এবং অনেক সাধনা ও তপস্যার প্রয়োজন হয়েছে; তারপর তাঁরা কোন না কোন কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত হয়েছেন । শ্রীরামকৃষ্ণ পনেরো বার গুরু পরিবর্তন করে ষোলো বারের বার তোতাপূরীকে পেয়ে পরমতত্ত্ব লাভ করেন । এমনকি তান্ত্রিক-সাধনাকালীন তিনি মানুষের মাংস পর্যন্ত ভক্ষণ করেছিলেন !! (তথ্য সূত্র: আলোক তীর্থ, : শৈলেন্দ্রনারায়ন ঘোষাল, প্রাক্তন ডিরেক্টর, দী বৈদিক রিসার্চ ইন্সিটিউট)। এর একমাত্র ব্যতিক্রম মহামানব শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর । যিনি শৈশবকাল হতেই ছিলেন জ্ঞানচূড়ামনি এবং মানবতাবাদের মূর্ত প্রতীক; কোনরকম শিক্ষা-দীক্ষা, তপস্যা, সাধন-ভজন ছাড়াই তিনি ছিলেন স্বয়ং সম্পূর্ণ । তাই তিনি পূর্ণব্রহ্ম পূর্ণাবতার।



Thank you for reading the article. Please follow and share this and support to grow further.

মন্তব্যসমূহ

SHRI SHRI HARICHAND THAKUR IS ONE OF THE SYMBOLS OF WORLD HUMANISM

Alor Sandhane - আলোর সন্ধানে

Alor Sandhane - আলোর সন্ধানে