Alor Sandhane - আলোর সন্ধানে
দশম পর্বঃ
গুরুচাঁদে হরিচাঁদের মিলন :
“শ্রীশ্রীহরিলীলামৃত” গ্রন্থের ‘তিরোভাব খন্ডে’ আমরা দেখতে পাই-----শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর ভক্তগণের নিকট বলেছেন :-
“আমি নাহি ছেড়ে যা’ব জানিও বিশেষ ।
গুরুচাঁদ দেহে এই করিনু প্রবেশ ।।
গুরুচাঁদে ভক্তি করিস্ মোর মত ।
যাহা চা’বি তাহা পা’বি মনোনীত যত ।।”
“শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ চরিতের” রচয়িতা ‘আচার্য’ মহানন্দ হালদার উপরিউক্ত চারটি লাইন সম্পর্কে মতামত ব্যক্ত করতে যেয়ে বলেছেন -----“এই বাণীর অন্তর্নিহিত সত্য কি ? ইহা কি দেহের সহিত দেহের মিলন বা শক্তির সহিত শক্তির মিলন ? এই “মিলনের” প্রকৃত অর্থ আমরা তখনই বুঝি যখন দেখি যে শ্রীশ্রীহরি ঠাকুরের পুত্র শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর আজীবন তাহারই মহান পিতার আদর্শে জীব জগতের কল্যাণ সাধন করিয়া গিয়াছেন । যখন দেখি যে তাঁহার শ্রীপাদ আশ্রয় তলেও অসংখ্য ব্যথিত-পরাণ নরনারী রোগ শোক, জ্বালা যন্ত্রনা হইতে মুক্তি লাভের আশায় সমবেত হইয়াছিল এবং দেব দুর্লভ শান্তিলাভের অধিকারী হইয়াছিল । ইহাই শ্রীশ্রীহরিচাঁদ-গুরুচাঁদ মিলন । ইহাই “মতুয়া” ধর্মের মর্ম্মকথা। মতুয়ামত জড়বাদী নয় ---- শক্তির সাধক ; দুর্ব্বার শক্তিবেগে অনাচার, অবিচারকে ধ্বংস করিয়া অগ্রগামীর বীর মূর্ত্তি । এই পরম সত্য প্রত্যেক মতুয়া জীবনের মূল মন্ত্র বলিয়াই শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ও শ্রীশ্রীহরিচাঁদকে তাহারা পৃথক করে না । তাহারা জানে ---- যে সঞ্জীবনী শক্তি তাহাদিগকে প্রাণ দিয়াছে, জাগ্রত করিয়াছে, উদ্বুদ্ধ করিয়াছে তাহা কোনও অপরাধের অপেক্ষা রাখে না ------- তাহাই বিশ্বধর শক্তি । এই শক্তির বিকাশ তাহারা যেখানেই দেখে সেখানে তাহারা শির অবনত করে । ইহাই ‘মতুয়া’ ধর্মের “মানুষেতে নিষ্ঠা”। ‘মানুষ’ বলিতে তাহারা দেহ কে বুঝে না । তাহারা শিখিয়াছে ‘দেহ’ আবরণ মাত্র এবং এই জন্যেই “মতুয়ার” “দীক্ষা” নাই পূজা পার্বণ নাই । তাহারা “একমেবাদ্বিতীয়ম” বলিবার প্রকৃত অধিকারী ।”
‘মতুয়া’ একটি শব্দ যার অর্থ হল---- মা + তুয়া = মতুয়া । ‘ম’, সংস্কৃত শব্দ হতে এসেছে । আর ‘তুয়া’ মৈথিলী ব্রজ ভাষার বুলি। অর্থাৎ ‘ম’ মানে আমি আর ‘তুয়া’ মানে তুমি। আমি ‘ম’ অর্থে জীবাত্মা, তুমি ‘তুয়া’ অর্থে পরমাত্মা । জীবাত্মা ও পরমাত্মার মিলিত অবস্থাই হল মতুয়া । মাধুর্যের সাথে ঐশ্বর্যের সহমিলন পদ্ধতির নামই হল ‘মতুয়া মত’ । শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর মাধুর্য এবং শ্রীশ্রীগুরুচাঁদ ঠাকুর ঐশ্বর্যের প্রতীক । ‘আদর্শ গার্হস্থ্য’ যার মূল ভিত্তি, এবং “হাতে কাজ, মুখে নামই” তার মূলমন্ত্র ।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন