Alor Sandhane - আলোর সন্ধানে




একাদশ পর্বঃ


গৃহে শ্রীহরির মন্দির স্থাপন :

মতুয়া ধর্মের দ্বাদশ আজ্ঞার একটি হল শ্রীহরির মন্দির স্থাপন করশ্রীহরির মন্দির স্থাপন কেন ? যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়তারা কিভাবে মন্দির স্থাপন করবেন ?  শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর সমস্ত বেদ-বিধিরউপরে ওঠার কথা বলতেন সর্বদাই এবং অযথা অর্থব্যয় করতে বারণ করতেন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে । তাহলে একথা বলা যায়, শুধুমাত্র বাহ্যিক মন্দিরের কথা শ্রীশ্রীঠাকুর বলতে পারেন না । তাই গৃহে শ্রীহরির মন্দির স্থাপনের অন্তর্নিহিত সত্যটি আমাদের উপলব্ধি করা বিশেষ প্রয়োজন । 

প্রথমেই বলি, শ্রীশ্রীঠাকুর মতুয়াদের দ্বাদশ আজ্ঞাপালন করতে বলেছেন । এখন প্রশ্ন আসে, মতুয়া কে বা কারা ? এর উত্তরে বলা যায়, যারা সমস্তরকম কুসংস্কার ত্যাগ করে বাস্তবসম্মত, বিজ্ঞানসম্মত এবং মানবতাবাদের পথে চলতে পারেন তারাই মতুয়ামতুয়াবাদকোন বিশেষ সম্প্রদায়ের মধ্যে আবদ্ধ নয় । তাই দেখা যায়, মতুয়াধর্মে সমস্ত সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন । কোন তন্ত্র-মন্ত্র বা দীক্ষালাভের মাধ্যমে মতুয়া সাজা যায় না, মতুয়া হতে হয় । এ প্রসঙ্গে সুদূর অস্ট্রেলিয়া থেকে আগত ডঃ সী, এস, মীডের নাম বিশেষ স্মরণীয় । তিনি খ্রীষ্টধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষে এসেছিলেন । ঘটনাচক্রে গুরুচাঁদ ঠাকুরের সান্নিধ্যে তিনি জ্ঞানদৃষ্টির অধিকারী হয়েছিলেন । তিনি বুঝেছিলেন, ধর্মের প্রণালী স্থান ও কালের উপর নির্ভর করে । মানুষই যেখানে শেষ কথা । মানুষের ভিতরকার অন্তর্নিহিত শক্তির উন্মেষ ঘটানোই ধর্মমতের প্রাথমিক উদ্দেশ্য । যার জন্য সর্বাগ্রে চাই শিক্ষা । গুরুচাঁদ ঠাকুরের বাস্তব চেতনাবোধ ও অত্যাধুনিক মনস্কতায় তিনি এতটাই প্রভাবিত হয়েছিলেন যে আজীবন তিনি গুরুচাঁদ ঠাকুরের সহকারী হিসেবে পতিত জাতির জন্য অসংখ্য কাজ করে গেছেন । তাঁর সহধর্মীনি মিস টাক্ গুরুচাঁদ ঠাকুরকে ধর্মপিতাবলে মেনে নিয়েছিলেন । ১৯২১ খ্রীষ্টাব্দে ডিসেম্বর মাসে ডঃ মীড ওড়াকান্দী হতে চিরবিদায় নিয়ে নিজদেশ অস্ট্রেলিয়া গমন করেন এবং বাড়ী ফিরে আপন ভবনের নাম রাখেন ওড়াকান্দী। একথা বলা যায়, মতুয়ার তালিকায় ডঃ সী,এস, মীড এবং তাঁর সহধর্মীনির নাম চিরকাল স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে । তাহলে দেখা গেল, সমস্ত নিয়মের বাইরে বেরিয়ে এসে যারা মানুষের জয়গান করতে পারেন তারাই মতুয়া ।

আচার্য মহানন্দ হালদারের ভাষায় ---- “মানুষ বলিতে তাহারা (মতুয়ারা) দেহকে বুঝে না । তাহারা শিখিয়াছে দেহ আবরণ মাত্র। আবার শ্রীমৎঅশ্বিনী সরকার তাঁর একটি গানে লিখেছেন -------

 

হারে যে দেশে মোর মনের মানুষ আমি সেই না দেশে যাব ।

আমি সেই মানুষের সঙ্গ নিয়ে আমার ত্রিতাপ জ্বালা জুড়াব ।।

 গানটি দেহতাত্ত্বিক ও আত্মতাত্ত্বিক । তাই গানটির তত্ত্ব নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক । এখানে আমারঅর্থে দেহ নয় ----- ‘জীবাত্মারচরম আর্তনাদ ধ্বনিত হয়েছে সেই পরমাত্মা-পরমেশ্বর-সম’ ‘শ্রীহরির সাথে মিলিত হবার আকাঙ্খায়। আর পরমেশ্বরবলতে সেই পূর্ণসত্ত্বানিরাকার পরম শক্তিকেই বোঝানো হয়েছে এবং যাকে শ্রীহরির সাথে তুলনা করা হয়েছে অর্থাৎ এই শ্রীহরিনিরাকার ।

 নদী সর্বদাই সাগরের প্রতি ধাবিত হয়, মিলনেই তাঁর শান্তি । তেমনি জীবাত্মাচায় পরমাত্মাপরমেশ্বরের সাথে স্থায়ীভাবে মিলিত হতে ।  কিন্তু পারে না, কারণ জীবাত্মা জীববদ্ধ এবং ষড়রিপুমন ও শরীরকে সর্বদাই বিপথে চালিত করতে সচেষ্ট, ফলে অতি সহজেই আমরা হই পথভ্রষ্ট  । কু-কর্মে জড়িয়ে পড়ি । এতে জীবাত্মা পীড়িত হয়, বিচলিত হয় । তাই সে এদেহে থাকতে চায় না । শ্রীহরির দেশে যাবার জন্য সে ব্যাকুল হয় । যেখানে কোন হিংসা-বিবাদ-ঝগড়া-জুয়াচুরি নেই, সাম্প্রদায়ীকতার বিষ নেই, আছে শুধু ভালবাসাবাসি । সেখানে গেলে কিছুই আর অপূর্ণ থাকে না ।

এই তাত্ত্বিক আলোচানাটুকু করা হল কারণ মতুয়ারা পরকালে বিশ্বাস করেন না । তাঁদের কাছে শুধুই ইহকাল । যা করার এই কালেই করতে হবে । তাই তারা সর্বপ্রথম সুস্থ শরীর ও মন গঠনের দিকে বিশেষ নজর দেন । দেহ ও মন শুদ্ধ হলে জীবাত্মা আর বিচলিত হয় না  অর্থাৎ সে স্থির হয় । তখন হৃদয়াকাশে প্রকৃত অর্থে নিরাকারপরমেশ্বর শ্রীহরির মন্দির স্থাপিত হয় । অর্থাৎ ইহকালেই পূর্ণসত্ত্বার পূর্ণানুভূতি ! এজন্যই মতুয়ারা মাতোয়ারা ! তাই শ্রীশ্রীহরিচাঁদ ঠাকুর প্রতিটি মতুয়ার গৃহে অর্থাৎ হৃদয়ে শ্রীহরির মন্দির স্থাপন করতে বলেছেন । তবে একথা ঠিক যে, যাদের দেখান বাস্তবসম্মত মত ও পথের মধ্য দিয়ে মানব জাতির সঠিক উন্নতি সম্ভব তাঁদের ভুলে গেলে চলে না । তাই তাঁদের আদর্শকে ধরে রাখতে এবং প্রচার ও প্রসার করতে সামর্থ অনুযায়ী ঘরে ঘরে তাঁদের প্রতি ভক্তি প্রদর্শন ও আলোচনা সভা করা উচিৎ ।


(চলবে)






Thank you for reading the article. Please follow and share this and support to grow further.

মন্তব্যসমূহ

SHRI SHRI HARICHAND THAKUR IS ONE OF THE SYMBOLS OF WORLD HUMANISM

Alor Sandhane - আলোর সন্ধানে

Alor Sandhane - আলোর সন্ধানে

Alor Sandhane - আলোর সন্ধানে